তখন সন্ধ্যাবেলা। একটি ইমেইল এসেছিল। ইমেইলের ভাষা ছিল এরকম- “যুক্তরাজ্য সরকারের- Commonwealth Commission in the UK আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। আপনি Commonwealth Shared Scholarship এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। University of Bristol এর Public Policy (MSc) প্রোগ্রামে আপনাকে স্বাগতম।”
QS World Ranking এ আবার সার্চ দিলাম। দেখলাম University of Bristol -এর Public Policy পৃথিবীর মধ্যে ১৪ তম অবস্থানে আছে আর পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টি ৫৫ তম অবস্থানে আছে।
খেই হারিয়ে ফেলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। খবরটি আমার জন্য আবেগের। রাত জাগা শত কষ্টের সফলতা এলো একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে। নিজেকে স্কলার হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি দেখতে পাওয়ার জন্য কত চেষ্টাই না করেছি! ভাবতেই পারছিলাম না আমি এখন একজন “Commonwealth Scholar” হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারি এবং এটি একমাত্র আমার নিজস্ব মেধা ও পরিশ্রমের অর্জন। যেটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা পূর্ণ ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের FCDO -এর অর্থায়নে Commonwealth Commission in the UK কর্তৃক সরাসরি প্রদত্ত। কমনওয়েলথের এই স্কলারশিপ স্কীম এর আওতায় আন্তর্জাতিকভাবে কমনওয়েলথ ভুক্ত ৪০ টি দেশের অন্তর্ভুক্ত দেশ থেকে অ্যাপ্লিকেশনগুলো সরাসরি কমনওয়েলথ কমিশনে জমা হয় এবং তখন, কমনওয়েলথ কমিশন ও আবেদনকৃত বিশ্ববিদ্যালয় কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করে প্রার্থী নির্বাচিত করে। একই পজিশনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য আবেদনপত্র কমনওয়েলথ কমিশনে জমা হয়।
মহান আল্লাহ তায়ালাকে ধন্যবাদ দিলাম। তার অসীম দয়া ও ভালবাসা সবসময়ই আমার জন্য ছিল। না হলে এতটা পথ পাড়ি দিতে পারতাম না। তিনি আমাকে এই সম্মানে ভূষিত করেছেন।
বাবা-মাকে জানালাম। তারা খুশি হলেন। পিতা মাতাকে খুশি করার মতো কোনো সংবাদ শোনানো সন্তানের জন্য সবচেয়ে বেশি গৌরবের। আমার জীবনে অসংখ্যবার এই আমি আমার পিতামাতাকে এরকম ভাবে গৌরবান্বিত করায় সুযোগ পেয়েছি।
আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মন্ডলী যারা তাদের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে অক্লান্ত চেষ্টা করে আমাদেরকে এতটা পথ দেখিয়েছেন, তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবো। খবরটি শোনার পরে তারা নিজেরাও খুশি হলেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন। রিকমেন্ডেশন লেটার সহ সকল কাজে আমার শিক্ষকরা যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তার অবদান কখনো ভুলতে পারবো না।
আমার ভাই-বোন সহ পরিবারের অন্যান্য সব সকল সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। প্রিয় বন্ধুগণদের ধন্যবাদ। ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন উত্থান-পতনের পতনের সময় তারা আমাকে আগলে রেখেছেন। সমাজ যখন তীব্রভাবে পিছন থেকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে, আমার নিজের পরিবারকে তখন দুর্গ হিসেবে পেয়েছি।
আমার সহকর্মী ও শিক্ষার্থীবৃন্দকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। তারা সব সময় ভালোবাসা ও সহযোগিতা দিয়ে আমাকে পাশে রেখেছেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা আরো একধাপ ভালো কিছু করার জন্য নিজেকে তাগিদ দিয়েছে।
একটা প্রচলিত ডায়লগ আছে যেটি আমি নিজেকেও বলতে চাই-
“Last but not least, I wanna thank me
I wanna thank me for believing in me
I wanna thank me for doing all this hard work
I wanna thank me for having no days off
I wanna thank me for, for never quitting”
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যুক্তরাজ্যের এই পড়াশোনা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারি। আপনাদের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে চাই।
সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।